বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে যেনতেনভাবে নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তবে নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ভুয়া ভোটার বাদ দিতে হবে। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, পরে অবাধ সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হতে হবে।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নরসিংদীর সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে নরসিংদী জেলা জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে মঈন-ফখরুউদ্দীনের দুঃশাসনের দুই বছর পরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সাড়ে ১৫ বছর- এই সাড়ে ১৭ বছর ভীষণ কষ্টের মধ্যে ছিল এ দেশের মানুষ। এই সময়ের ভেতরে অসংখ্য আল্লাহর বান্দা-বান্দী খুন, গুম, অপহরণ ও আয়নাঘরের বাসিন্দা হয়েছেন। অনেকে পঙ্গু ও আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের ওপর বাড়তি জুলুম করা হয়েছে। এক এক করে জামায়াতের ১১ শীর্ষ নেতাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের নামে তামাশা করে কাউকে দেওয়া হয়েছে ফাঁসি, কাউকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুর দিকে।
তিনি বলেন, যারা জনগণের সম্পদ লুটে গত সাড়ে ১৫ বছর আমাদের দেশ থেকে ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এ দেশকে তারা তাদের দেশ মনে করে না। তারা রাজনীতি করে বাংলাদেশে, বউ-বাচ্চাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বিদেশে। কানাডায় তারা বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ তারা চুরি করে নিয়ে গেছে। অথচ তারা অন্যদের চোর বলত।
তিনি আরও বলেন, আপনারা লক্ষ করেছেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা তথা ইউনিয়ন কার্যালয়গুলো পর্যন্ত তালাবদ্ধ করে রেখেছে। জামায়াত একমাত্র দল, যে দলের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয় ফ্যাসিবাদ আপাতত বিদায় নিয়েছে, নিবন্ধনটি আমরা এখনো ফিরে পাইনি। এখনো সেই নিবন্ধন ফিরে পেতে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়। আমাদের দেশপ্রেম ও ফ্যাসিবাদের কাছে মাথা নত না করার কারণে আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের নিবন্ধনটি ফ্যাসিবাদের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
ডা. শফিকুর বলেন, মিথ্যা মামলায় যত নেতাদের আটক করা হয়েছিল, একে একে সবাই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো মুক্তি পাননি। জনতার দাবি, তাকে এখনই মুক্তি দিতে হবে। তিনি মজলুমদের প্রতীক। এক এক করে আমাদের শ্রেষ্ঠ নেতাদের তারা খুন করেছে, আল্লাহ তায়ালা তার একজন বান্দাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। উনাকে সম্মানের সঙ্গে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। যদি মুক্তি দিতে গড়িমশি করা হয় তবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জনসম্পৃক্ত ন্যায্য দাবিসহ আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে মাঠে নামবে।
তিনি বলেন, এ মাসটি হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের মাস। এই মাসে যারা প্রাণ দিয়েছিল, তাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আল্লাহ তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুক। ৫২ গেল, ৭১ গেল, দেশ স্বাধীন হলো, কিন্তু বরকতের জীবিত মা এখনো ভাঙা একটি খুপরি ঘরে বসবাস করছেন। এটি জাতির জন্য লজ্জার। যারা ৫২-কে পুঁজি করে রাজনীতি করে, তারাই তো দেশ চালিয়েছে। তাহলে বরকতের মাকে কেন খুপরি ঘরে রাখা হলো।
তিনি আরও বলেন, বিচারকরা আদালতে বসে বিচারের নামে একেক জনের বিরুদ্ধে হত্যার রায় দিয়ে রাতে গিয়ে টেলিভিশনের টকশোতে বসে গর্ব করে বলত, ‘আজকে নিজামীকে, কালকে গোলাম আজমকে, পরশু সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে এসেছি।’ এদের মধ্যে কেউ কেউ বলত, আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। বিচারকের চেয়ারে বসে যারা রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে জাতির কলঙ্ক। সে বিচারক হতে পারে না। প্রত্যেকটি গণহত্যাকারীকে দেশে হোক, বিদেশে হোক, পাকড়াও করে ট্রাইব্যুনালের হাতে তুলে দিতে হবে। এদের বিচার জাতি দেখতে চায়।’
জামায়াতে আমির বলেন, মাফিয়া খুনিদের গডফাদার ছিল শেখ হাসিনা। তারই আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে সব খুনিরা লালিত পালিত হয়েছে। এগুলো আমরা বললে কিছু কিছু মানুষ সন্দেহ করত, এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য। গত পরশু তাদের বয়ান বিশ্ববাসীর কাছে এসেছে। তাদের আমলনামা গোটা দুনিয়ার মানুষ জানতে পেরেছে। তারা কী করেছে, কোন অপরাধটা তারা করেনি সবকিছু বের হয়ে আসবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই অপরাধীদের বিচার হোক। কিন্তু আমরা এটাও চাই, তাদের ওপরও ন্যায়বিচার করা হোক। তাদের ওপর যেন কোনো অবিচার না করা হয়। আমাদের ওপর জুলুম করা হয়েছে, আমরা জুলুমের কষ্ট বুঝি। আর কারও ওপর জুলুম হোক এটা আমরা চাই না।
নরসিংদী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো. মোছলেহুদ্দীনের সভাপতিত্বে ও নরসিংদী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় আয়োজিত জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আ ফ ম আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আবদুল জব্বার, জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল মান্নান, অ্যাড. মশিউল আলম, মুফতি রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মকবুল হোসেন, আজম রুহুল কুদ্দুস, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, হাফেজ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এইচ